বাচ্চাদের ঘুমের উপর অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইমের প্রভাব কী?

আজকের ডিজিটাল যুগে, বাচ্চাদের জন্য স্ক্রীন টাইম সীমিত করা ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে। স্মার্টফোন থেকে ট্যাবলেট, ল্যাপটপ, গেমিং কনসোল এবং টেলিভিশন, স্ক্রিন সর্বত্র রয়েছে৷ যাইহোক, গবেষণায় দেখা গেছে যে অতিরিক্ত স্ক্রীন টাইম শিশুদের ঘুমের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, যা শেষ পর্যন্ত তাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার উপর প্রভাব ফেলতে পারে।


তাহলে, বাচ্চাদের ঘুমের উপর অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইমের প্রভাব ঠিক কী? এর একটি ঘনিষ্ঠ কটাক্ষপাত করা যাক.

১. বিলম্বিত ঘুমের সূত্রপাত


বাচ্চাদের ঘুমের উপর অত্যধিক স্ক্রীন টাইমের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রভাবগুলির মধ্যে একটি হল ঘুমের দেরি হওয়া। স্ক্রিন দ্বারা নির্গত নীল আলো মেলাটোনিনের উৎপাদনকে দমন করে, একটি হরমোন যা ঘুম-জাগরণ চক্রকে নিয়ন্ত্রণ করে। এর মানে হল যে বাচ্চারা স্ক্রিনের সামনে খুব বেশি সময় কাটায় তাদের রাতে ঘুমাতে অসুবিধা হতে পারে। ফলস্বরূপ, তারা দিনের বেলায় ক্লান্ত এবং খিটখিটে বোধ করতে পারে, স্কুলে বা অন্যান্য কার্যকলাপে তাদের কর্মক্ষমতা প্রভাবিত করে।

২. ব্যাহত ঘুমের ধরণ


অতিরিক্ত স্ক্রীন টাইম বাচ্চাদের ঘুমের ধরণকেও ব্যাহত করতে পারে, যার ফলে ঘুমের মানের খারাপ হতে পারে। এমনকি যদি শিশুরা দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তে পারে, তবুও স্ক্রিন থেকে আসা নীল আলো তাদের ঘুমের গুণমানকে প্রভাবিত করতে পারে। এর ফলে রাতের বেলা আরও ঘন ঘন জাগরণ, সেইসাথে হালকা এবং কম পুনরুদ্ধারকারী ঘুম হতে পারে। যেসব শিশু পর্যাপ্ত গভীর ঘুম পায় না তাদের ক্লান্তি, মেজাজের পরিবর্তন এবং মনোযোগ দিতে অসুবিধা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

৩. ঘুম বঞ্চনা


বাচ্চাদের ঘুমের উপর অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইমের আরেকটি প্রভাব হল ঘুমের অভাব। যখন শিশুরা পর্যাপ্ত ঘুম পায় না, তখন তাদের শরীরে পুনরুদ্ধার এবং রিচার্জ করার জন্য পর্যাপ্ত সময় থাকে না, যা বিভিন্ন শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। ঘুম বঞ্চিত শিশুরা স্থূলতা, ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্যের অবস্থার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতেও সমস্যা হতে পারে, যা আচরণগত সমস্যা এবং সামাজিক মিথস্ক্রিয়াতে অসুবিধা হতে পারে।

৪. উদ্বেগ এবং বিষণ্নতা ঝুঁকি বৃদ্ধি


গবেষণায় দেখা গেছে যে অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম শিশুদের মধ্যে উদ্বেগ এবং বিষণ্নতার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। ঘুমের বঞ্চনা এবং ব্যাহত ঘুমের ধরণ উভয়ই উদ্বেগ এবং বিষণ্নতার অনুভূতিতে অবদান রাখতে পারে। উপরন্তু, শিশুরা পর্দায় যে বিষয়বস্তু প্রকাশ করে তা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও প্রভাব ফেলতে পারে। যে শিশুরা সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক সময় ব্যয় করে, উদাহরণস্বরূপ, অবাস্তব মান মেনে চলার চাপের কারণে উদ্বেগ এবং হতাশার অনুভূতি অনুভব করার সম্ভাবনা বেশি হতে পারে।

৫. স্কুলে খারাপ পারফরম্যান্স


অবশেষে, অতিরিক্ত স্ক্রীন টাইম শিশুদের একাডেমিক পারফরম্যান্সের উপরও প্রভাব ফেলতে পারে। ঘুম-বঞ্চিত শিশুরা মনোযোগ এবং একাগ্রতার সাথে লড়াই করার সম্ভাবনা বেশি, যা তাদের পক্ষে তথ্য শেখা এবং ধরে রাখা কঠিন করে তোলে। উপরন্তু, মানসিক স্বাস্থ্যের উপর স্ক্রীন টাইমের প্রভাবও খারাপ একাডেমিক পারফরম্যান্সে অবদান রাখতে পারে। যেসব শিশু উদ্বেগ এবং বিষণ্নতার সাথে লড়াই করছে তাদের স্কুলে ফোকাস করতে বা সময়মতো অ্যাসাইনমেন্ট শেষ করতে সমস্যা হতে পারে।

উপসংহারে, অত্যধিক স্ক্রীন টাইম শিশুদের ঘুমের উপর নানা ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, যার মধ্যে দেরীতে ঘুম শুরু হওয়া, ঘুমের ধরণ ব্যাহত হওয়া, ঘুমের বঞ্চনা, উদ্বেগ ও বিষণ্নতার ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া এবং দুর্বল একাডেমিক কর্মক্ষমতা। পিতামাতা হিসাবে, বাচ্চাদের স্ক্রীনের সময় সীমিত করা এবং স্বাস্থ্যকর ঘুমের অভ্যাসকে উত্সাহিত করা গুরুত্বপূর্ণ, যেমন একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ শয়নকালের রুটিন স্থাপন করা, শোবার আগে স্ক্রিন এড়ানো এবং একটি শান্ত এবং আরামদায়ক ঘুমের পরিবেশ তৈরি করা। শিশুদের ঘুমকে প্রাধান্য দিয়ে, আমরা তাদের সুস্থ ও সুখী ব্যক্তি হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করতে পারি।

Next entry: শিশুদের অনলাইন ইন্টারঅ্যাকশন এবং আচরণের জগতে নেভিগেট করা

Previous entry: খাবার পরিকল্পনা এবং প্রস্তুতিতে অংশগ্রহণ করতে শিশুদের উত্সাহিত করা

{footerx}